স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখানে থাকি। কিন্তু দেশেতো মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনরা আছেন। বন্যার পানি উঠে গেছে হঠাৎ করে। চারদিকে পানি সবাই কস্ট করতেছে। নিজেদের জন্য এবং প্রতিবেশীদের জন্য যাতে উপকার হয় সেজনই টাকা পাঠাচ্ছি দেশে। এমন ভালোবাসার টান শোনা গেছে টাকা নোয়াখালীর সেনবাগের ইয়ারপুরের বাসিন্দা নিউইয়ক সিটির ব্রুকলিনের ইস্ট ইউয়র্কে বসবাসকারী মোঃ মাসুদ হাসান।
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল, টানা বর্ষণে ঢুবে যাওয়া ১১ জেলার বন্যাপীড়িত স্বজনদের জন্য প্রবাসীদের এমন ভালোবাসায় যুক্তরাষ্ট থেকে প্রেরিত রেমিটেন্স প্রবাহে জোয়ার বইয়ে দিচ্ছেন। প্রতিটি মানি এক্সেচেঞ্জে মাসুদ হাসানের মতো প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর জন্য ভীড়ের কারণে ঈদ মওসুমের ব্যাস্ততম পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রহত্যা এবং সহিংস ঘটনার জের ধরে অনিশ্চয়তা এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার পর গত ১৭ জুলাই থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমতে থাকে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকা, ব্যাংক বন্ধ থাকা, কার্ফ্যুসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং আওয়ামীলীগ সরকারের পতন তরান্বিত করতে রেমিটেন্স না পাঠানোর প্রচারণার কারণে ১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রেরণ তলানীতে ঠেকে। ইন্টারনেট চালুর পর পর কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে টাকা প্রেরণে প্রবাসীরা সতর্ক ছিলেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ বন্যাকবলিত জেলাগুলো সর্বাধিক প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০-৪০ ভাগ রেমিটেন্স প্রেরণ বেড়েছে। তাছাড়া সকল জেলার প্রবাসীরা কোননা কোন ভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহের এই উর্ধ্বগতি বলে জানিয়েছে মানি এক্সচেঞ্জগুলো।
সোমবার বিকালে নিউইয়র্ক সিটির ওজনপার্কে সোনালী এক্সচেঞ্জের শাখায় গিয়ে দেখা যায় ৪জন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দেশে টাকা পাঠাতে। এসময় কুমিল্লার বুড়িচংয়ের মোঃ ইসলাম জানান, পানি বেড়ে গেছে পরিবারের জরুরী খরছের জন্য টাকা পাঠাতে এসেছেন। তাছাড়া এলাকার মানুষজনও আছে। উদ্বেগ আর ভালোবাসা মেশানো কন্ঠে বলেন এই প্রবাসী।
ব্যাংক এশিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএ এক্সপ্রেস ওজনপার্ক শাখার কাস্টমার সার্ভিস অফিসার আহমেদ মাসুম কচি জানান, দেশের সহিংসতার সময় রেমিটেন্স প্রেরণ একেবারেই কমে গিয়েছিলো। ধীরে ধীরে সেটি স্বাভাবিক হয়। এখন স্বাভাবিক অবস্থার চেয়েও ৩০ শতাংশেরও বেশী রেমিটেন্স যাচ্ছে।
রেমিটেন্সের প্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী আখ্যা দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসের সিইও মোঃ মালেক বলেন- প্রবাসীরা বন্যাপীড়িত স্বজনদের জন্যই এখন টাকা পাঠাচ্ছে দেশে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই হার ৩০ শতাংশেরও বেশী হতে পারে।
রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক বেশী। এটির তুলনামূলক বিচার করা যাবেনা। কারণ, এখনকার টাকাটা পুরোই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবারের জন্য পাঠাচ্ছে সবাই। যদি অন্যকারণে পাঠাতো তাহলে তুলনা করা যেতো। এমনটি জানিয়েছেন সোনালী এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিইও নোয়াব আলী। তাঁরমতে বন্যাউপদ্রুত এলাকাসমূহ প্রবাসী অধ্যুষিত সেজন্য রেমিটেন্স যাচ্ছে বেশী।
মানি ট্রান্সফার কোম্পানী সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেসের সিইও মাসুদ রানা তপনের মতে বন্যা উপদ্রুত এলাকার প্রবাসীরা এখন বন্যায় ক্ষতি মোকাবেলায় দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। একইসাথে সারাদেশের প্রবাসীরাও নানান ভাবে বন্যায় সহায়তা করছেন। এজন্য রেমিটেন্সের প্রবাহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশী।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.