সাধারণত শনিবার ছুটির দিনে প্রবাসীরা দেশে বেশী টাকা পাঠিয়ে থাকেন। অথচ; অন্য শনিবারের তুলনায় এখন পর্যন্ত (২০ জুলাই শনিবার রাত পৌনে ৯টা) বড়জোর ১৫/১৬ শতাংশ গ্রাহক দেশে টাকা পাঠাতে এসেছেন। দেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতি, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এবং দুইদিনের বাড়তি ছুটি ঘোষণার কারেণ অনেকে টাকা পাঠাতে আগ্রহ হারিয়েছেন ।ফলে এই অবস্থা, তাছাড়া টাকা তুলতে পারবে কিনা এমন অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন অনেকেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির বাঙালী অধ্যুষিত ব্যাস্ততম জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশী মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসের ম্যানেজার আজিজুল হক। তাঁর মতে- টাকা পাঠালে সেটি একাউন্টে থেকে যাবে, যখন ব্যাংক খুলবে তথা সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন কিন্তু টাকা তুলতে পারবে। এটি গ্রাহকদের অনেকেই আস্থায় আনতে পারছেননা বলে মনে হয়।
একই কথা শোনা গেলো ডাইভারসিটি প্লাজার মানি ট্রান্সফার এজেন্ট জাহিদের কন্ঠেও। তিনি বলেন, অন্য শনিবার এখন পর্যন্ত (২০ জুলাই শনিবার রাত সোয়া ৮টা) ১’শর কমবেশী গ্রাহক টাকা পাঠাতে আসতো। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ৬জন এসেছেন টাকা পাঠাতে।
প্রবাসীদের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণের একমাস না যেতেই এমন হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম যোগানদাতা রেমিটেন্স প্রবাহ। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে হামলা-সহিংসতা, ছাত্র হত্যার জের ধরে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরস্থিতির পাশাপাশি বিটিআরসি ভবনে ডাটা সেন্টার ক্ষতিগ্রহস্থ হওয়া, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা কারণে প্রবাসীরা টাকা পাঠানো থেকে বিরত রয়েছন বলে জানিয়েছেন মানি ট্রান্সফার কোম্পানীর এজেন্ট, মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স প্রেরণ না করতে প্রচারণা চালায় কোটা আন্দোলনের সমর্থকারীরা। এতে করে অনেকেই টাকা পাঠানো বন্ধ রাখেন বলে এই প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন।
একাধিক মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে কথা বলে জানা গেছে, সাপ্তাহের অন্যদিনের চেয়েও শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার এবং রোববার মানি এক্সচেঞ্জ ও এজেন্টদের অফিসে প্রবাসীরা গিয়ে থাকেন টাকা পাঠাতে। শুক্রবার এবং শনিবার দুইদিনই মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে গ্রাহকদের উপস্থিতি ছিলো কম। কেউ বলছেন মঙ্গলবারের পর রেমিটেন্স প্রেরণের প্রবাহ কমতে থাকে।
শুক্রবার দুপুরে কুইন্সের ওজন পার্কে একাধিক মানি একচেঞ্জের অফিসে গিয়ে দেখা যায় ঢিমেতালে আসছেন গ্রাহকরা। এসময় তাঁরা দেশের পরিস্থিতির কারণে গ্রাহক কমে যাওয়ার বিষয়টি বলেন। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কারণে বিকাশ একাউন্টগুলো ভেরিফাই করা সম্ভব হয়না। তারওপর দুইদিনের সরকারি ছুটি যুক্ত হয়েছে।
রোববার দুপুরে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী মালিকানাধীন মানিট্রান্সফার কোম্পানী সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেস’র প্রধান নির্বাহী মাসুদ রানা তপনের সাথে। তিনি জানান, মঙ্গলবারের পর থেকেই দেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমতে থাকে। সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন প্রবাসীরা বেশী টাকা পাঠায়। দেশের সহিংস পরিস্থিতি, টাকা না পাঠানোর প্রচারণা, ইন্টারনেট সংযোগসহ নানাবিধ কারণে এই অবস্থা। তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় টাকা পাঠােনা এই শুক্রবার-শনিবার ৬০ শতাংশেরও বেশী কমেছে ।
তাছাড়া আজকে (রোববার) টাকা পাঠালেওতো কাল সোমবার টাকা তুলতে পারবেনা। তবে; পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে রেমিটেন্স প্রেরণে আবার গতি ফিরবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
প্রসঙ্গতঃ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শীর্ষ তিন রেমিটেন্স প্রেরনকারী দেশের অন্যতম। এরমধ্যে প্রায়ই প্রথম স্থানে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশী ছাত্র, অভিববাসন প্রত্যাশী আসেন এই দেশে। আর বেশীরভাগ বাংলাদেশীর বসবাস নিউইয়র্কে।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.