বাংলাদেশ সেমিট্রি ও ফিউনারেল হোম প্রকল্পের নানান দিক সবিস্তারে তুলে ধরেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু।
বক্তব্য রাখছেন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা- মুনা’র নির্বাহী পরিচালনক আরমান চৌধুরী।
বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ।
বক্তব্য রাখছেন শাহনেওয়াজ গ্রুপের সিইও মোঃ শাহনেওয়াজ।
সভা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মীর্জা আবু জাফর বেগ।
সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে একজন মানুষ একা অথবা পরিবারের সাথে পা রাখে আমেরিকায় । একা মানুষটির পরিবার হয় আর পরিবারটির পরিসর দিনদিনে আরো বাড়ে । একটা সময় বড় কমিউনিটি তৈরী হয়, নিজেও যুক্ত হয় নানান আয়োজনে। নানা চড়াই উৎরাই সত্ত্বেও বেশীরভাগ প্রবাসীই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাটিয়ে দেন এইদেশে। এখানে আসাটা ওয়ান ওয়ে- এমনটাই ফেরে মুখে মুখে। অথচ; মৃত্যুর পর সমাহিত করার প্রস্তুতি থাকেনা তেমন।
মরদেহ দাফন করতে কবরস্থানগুলোতে (সেমিট্রি) কমিউনিটি সংগঠনের পাশাপাশি ব্যাক্তি উদ্যোগে অনেকে কবর কিনে রাখেন। করোনাকালীন সময়ে কবরের সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। তখন অনেক মরদেহ গ্রহণ করেনি স্বজনরা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার (ভ্রাম্যমান মর্গ) ভাড়া করে মরদেহ রাখতে হয়েছে। অনেক বেওয়ারিশ লাশ আমাদেরকে দাফন করতে হয়েছে হয়েছে, কবরের জন্য হাহাকার করতে দেখা গেছে। তখন মুসলিম রীতি অনুযায়ী পরিকল্পিত কবরস্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। আজকের সময়ে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি সেটির পরিকল্পিত বাস্তবায়ন করছে, নিঃসন্দেহে এটি অনেক বেশী প্রশংসার দাবী রাখে।
বুধবার সন্ধ্যায় উডসাউডের গুলশান ট্যারেসে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন “বাংলাদেশ সেমিট্রি ও ফিউনারেল হোম” প্রকল্পের পরিচিতি সভায় বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি, বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আবেগতাড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন। এসময় বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কবর ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের তথা মুসলমানদের নিজস্ব মালিকানায় প্রথমবারের মতো এবং বহুল প্রতিক্ষিত বাংলাদেশ সেমিট্রি ও ফিউনারেল হোম প্রকল্পের নানান দিক সবিস্তারে তুলে ধরেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু।
এ উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি ইউসুফ জসিম। সভায় বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা কমিউনিটি সংগঠন, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্টজন, সাংবাদিকসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সেমিট্রি ও ফিউনারেল হোম প্রকল্পের পরিচিতি পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া।
প্রকল্পটি উপস্থাপনকালে জাহিদ মিন্টু বলেন, নিউইয়র্ক স্টেটের অরেঞ্জ কাউন্টির মিডল টাউন এলাকায় ১২৬ একর ভূমিতে ৩টি ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে এক লাখের বেশী কবর সংকুলান হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ এবছরই শুরু হবে। মিডল টাউনের প্ল্যানিং বোর্ডেও অনুমতি স্বাপেক্ষ এবং সেমিট্রি’র বিধিমালা অনুসরণ করে প্রতিটি কাজ করা হবে। এতে দীর্ঘকায় মানুষ এবং শিশুদের জন্য কবরের ব্যবস্থা থাকবে। সেমিট্রিতে মসজিদ এবং বিশ্রামাগার থাকবে।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২৩ হাজার ৭১১টি কবর প্রস্তুত হবে। এরমধ্যে শিশুদের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১৮’শ কবর। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে এখন ১৫ হাজার কবর বিক্রি হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মসজিদ, ব্যাক্তি ও কমিউনিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে কবর ক্রয়ের প্রস্তাব পেয়েছে তিনি। প্রতিটি কবরের দাম থাকবে ৭’শ থেকে ৮৫০ ডলারের মধ্যে।
সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত করেন মাওলানা জুনায়েদ। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দিকী, মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা- মুনা’র নির্বাহী পরিচালনক আরমান চৌধুরী, কমিউনিটির বিশিষ্টজন এটর্নি মইন চৌধুরী, শাহনেওয়াজ গ্রুপের সিইও মোঃ শাহনেওয়াজ, শাহ জে গ্রুপের সিইও শাহ জে চৌধুরী, ইমিগ্র্যান্ট হোম কেয়ারের সিইও গিয়াস আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, ট্রাস্টি কামাল পাশা বাবুল, সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, ক্রীড়া সম্পাদক মাইনুল উদ্দিন মাহবুব।
বৃহত্তর নোয়াখালী সোটাইটির উপদেস্টা নজির হোসেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, ট্রাস্টি খোকন মোশারফ, সহ-সভাপতি তাজু মিয়া, সাবেক সেক্রেটারি বেলাল হোসেন (বিএনএস বেলাল), জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান, বিয়ানীবাজার সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান, জামাইকা ফ্রেন্ডস্ সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কোম্পানীগন্জ ওয়েলফেয়ার এশোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন সবুজ, আসাল’র প্রেসিডেন্ট মেসবাহ উদ্দিন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশ সোসাইটির এম এ আজিজ, সাংবাদিক আবু তাহের, সাংবাদিক শহিদউল্যাহ, ড্রামের কাজী ফৌজিয়া, বগুড়া সোসাইটির সভাপতি মহব্বত আলী আকন্দ, বাংলাদেশ সোসাইটির এম আজিজ, জামাইকা সোসাইটির ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদের বক্তব্য সবার মাঝে আবেগ স্পর্শ করে। তিনি বলেন, এতোদিন শুধু কালচারাল নানা আয়োজনের সাথে জড়িত ছিলাম। আজকে এখানে এসে মনে হয়েছে সময় আর বেশী নাই। কবরের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্নকর্তারা কবরের দাম কমানোর প্রস্তাব করেন। এসময় ড্রামের কাজী ফৌজিয়া প্রশ্নোত্তর পর্বে বিনামূল্যে নথিপত্র বিহীন প্রবাসী এবং বেওয়ারিশ লাশ দাফনের সুযোগ থাকবে কিনা প্রশ্ন রাখেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে জাহিদ মিন্টু সেমিট্রির সকল বিধিমালা অনুসরণ, মানবিক দিক বিবেচনা এবং সময় অনুযায়ী দামের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে বলে সভায় অবহিত করেন।
অনুষ্ঠান শেষে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মীর্জা আবু জাফর বেগ। এবং সভা শেষে সবাই নৈশভোজে অংশ নেন।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.