রোববার ইফতার মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া। ছবি-দেশি খবর।
ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা গ্রহীতার হাতে নো-ভিসা রিকোয়ার্ড সিল সেবা তুলে দিচ্ছেন সাবেক কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম। ফাইল ছবি।
ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখছেন সাবেক কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা। ফাইল ছবি।
বর্তমান কনসাল জেনারেল আসার পর আমরা দুই তিনবার মিটিং করেছি ভ্রাম্যামান কনস্যুলেট সেবা পুনরায় চালুর জন্য কিন্তু উনারা কিছুতেই সেবাটা দিচ্ছেনা। এতে করে ব্রংকস্ এবং ব্রুকলিনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদায়ী কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলামের সময়েও ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা চালু ছিলো। বর্তমান কনসাল জেনারেল আসার পর এই সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
রোববার কুইন্সের উডসাইডের তিব্বতি কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ সোসাইটির ইফতার মাহফিলে সমাপনী বক্তব্যে ক্ষুব্ধ কন্ঠে কথাগুলো বলেন সভাপতি আব্দুর রব মিয়া। এসময় তিনি উপস্থিত সহস্রাধিক প্রবাসী কমিউনিটি ব্যাক্তিত্বের উদ্দেশ্যে বলেন, ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা চালু না হলে প্রয়োজনে আপানাদেরকে সাথে নিয়ে কনসাল জেনারেল অফিসের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপির কমসূচী দেয়ার কথা বলেন।
এদিকে আব্দুর রব মিয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। তাঁর মতে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের নিরীক্ষা আপত্তির কারণে ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা বন্ধ রয়েছে। তাঁরা এই সেবা প্রদান সংক্রান্ত ব্যায়ে আপত্তি দিয়েছেন। তাছাড়া নিউইয়র্কের বাইরে এই সেবা চালু রয়েছে।
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ জানান, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীর বসবাস এই নিউইয়র্ক সিটিতে। প্রতিনিয়তই প্রবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। নানা ব্যাস্ততা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় কনাসাল জেনারেল অফিসে গিয়ে সেবা গ্রহণে তাঁদের বেগ পেতে হয় অনেক সময়। কনস্যুলেট সেবা প্রবাসীদের দৌরগোড়ায় নিয়ে যেতে ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা চালু করা হয়েছিলো। তখন সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ সোসাইটি। এতে ব্রংকস্ ও ব্রুকলিনের প্রবাসীরা উপকৃত হন এবং ব্যাপক সাড়া পড়ে।
সেবা সমূহের মধ্যে ছিলো বাংলাদেশী পাসপোর্ট নবায়ন, নো ভিসা রিকোয়ার্ড সিল, এলাইড সার্টিফিকেট প্রদান, বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংশোধন, বাংলাদেশী অন্যান্য সনদ পত্রের সত্যায়ন, পাওয়ার অব এটর্ণি সত্যায়ন ও দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের আবেদন পত্র গ্রহণ ইত্যাদি।
কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা এবং ড. মনিরুল ইসলামের সময়ে নিয়মিত এই সেবার আয়োজন করা হতো। এবং তাঁরাও স্ব-শরীরে সেবা কর্মসূচীতে অংশ নিতেন। ছুটির দিনে এমন সেবা নাগালে পেয়ে প্রবাসীরাও আনন্দিত ছিলো। কিন্তু বর্তমান কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা যোগদান করার পর এই সেবা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও অদৃশ্য হাতের ইশারায় এইসেবা বন্ধ হয়েছে এমন সরব আলোচনা কমিউনিটিতে থাকলেও কোন পক্ষই এনিয়ে মুখ খুলতে চাননা।
এনিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দু রব মিয়া, সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দীকি, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি জাহিদ মিন্টু বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার সাথে একাধিকাবার বৈঠক করে ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা চালু দাবি জানান। তখন বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অবহিত করার কথাও হয়। কিন্তু, কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এ সেবা চালু হয়নি।
এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ ইনক্ এর বার্ষিক সাধারণ সভায় ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা বন্ধ কেন প্রশ্ন তোলেন এবং চালুর দাবি তোলেন উপজেলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কেননা ব্রুকলিনে এই সেবাটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। সেই সভায়ও আব্দুর রব মিয়া কনসাল জেনারেল অফিসের নিস্পৃহাকে দায়ী করেন।
রোববার বাংলাদেশ সোসাইটির সভায় আব্দুর রব মিয়া বলেন, প্রবাসীরা ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবায় উপকৃত হন। এজন্য বর্তমান কনসাল জেনারেলকে বহু চেষ্টা করেও বুঝাতে ব্যার্থ হয়েছি, উনাকে কনভিন্স করতে পারিনি। আমি আবারো বৈঠক করবো আবারো চেষ্টা করবো এই সেবা যেনো চালু হয়। রব মিয়ার বক্তব্য শেষ হলে উপস্থিত সবাই সংহতি প্রকাশ করেন।
এনিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের নিরীক্ষার সময় তাঁরা একই সিটিতে ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা কর্মসূচীতে আপত্তি দিয়েছে। কারণ এতে খরছের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। এখানে তাঁর ব্যাক্তিগত ইচ্ছা কিংবা মতামতের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সোসাইটিসহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মতামত তিনি মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অবহিত করবেন। অডিট আপত্তি প্রত্যাহার এবং পুনরায় অনুমোদন না পেলে এই সেবা চালু করা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.