রমজানের এই সময়ে একসময় সোনালী এক্সচেঞ্জে দেশে টাকা পাঠাতে গ্রাহকদের ভীড় লেগে থাকতো। শাখা অফিসের বাইরেও গ্রাহকদের ভীড় লেগে থাকতো। এখন গ্রাহকদের তেমন ভীড় দেখা যায়নি। ছবিটি ১৮ মার্চ বিকালে তোলা। ছবি-দেশি খবর।
রমজানের এই সময়ে একসময় সোনালী এক্সচেঞ্জে দেশে টাকা পাঠাতে গ্রাহকদের ভীড় লেগে থাকতো। শাখা অফিসের বাইরেও গ্রাহকদের এভাবে ভীড় লেগে থাকতো। ছবিটি ৬ এপ্রিল ২০২২ সালো তোলা। -ফাইল ছবি।
প্রবাসীরা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার লাইফ লাইন রেমিটেন্সের যোগানদাতা। টাকা পাঠানোর সময় তাই ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্যের দিকে সজাগ থাকেন সবাই। গত একবছর ধরেই ডলারের দামে পিছিয়ে ছিলো রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী এক্সচেঞ্জ। প্রতিদিন প্রবাসীদের সংখ্যা বাড়লেও এতে করে সোনালী এক্সচেঞ্জের গ্রাহক কমতে থাকে হু হু করে। ফলে রেমিটেন্স সংগ্রহে পিছিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। কারণ, যেখানে বাড়তি দাম থাকে সেখান থেকেই টাকা পাঠানোর প্রবণতাই বেশী।
এরই মধ্যে বোনাস বাড়িয়ে এবং ফি তুলে নিয়ে গ্রাহক ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয় সোনালী এক্সচেঞ্জ। প্রতিযোগীতায় ফিরতে এবং গ্রাহক হ্রাস ঠেকাতে রমজানে আবারও ১ শতাংশ বোনাস বাড়িয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ব্যাবধান পূরণের পদক্ষেপ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ডলারের দাম পড়তে শুরু করায় এবং বোনাস বাড়ানোয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগীতায় ফিরেছে এবং গ্রাহক বাড়ছে দাবী সোনালী এক্সচেঞ্জের।
রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রবাসীদের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন মানি একচেঞ্জ, ব্যাংকের শাখা ও এজেন্ট অফিস ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে সোনালী এক্সচেঞ্জ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করে দিচ্ছে ডলারের দাম। অথচ পাশেই ব্যাংক অব এশিয়ার বিএ এক্সপ্রেস এবং স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস ১১৫ টাকা করে ডলারের দাম দিচ্ছে। বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার কোম্পানী ১১৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭৫ পয়সা দাম দিচ্ছে। এটি ছিলো ২৩ মার্চ শনিবারের চিত্র। বর্তমানে সোনালী এক্সচেঞ্জ থেকে টাকা পাঠালে ডলারের বিপরীতে দাম পড়ে প্রণোদনাসহ ১১৬ দশমিক ০৭ টাকা। কিন্ত টাকা পাঠাতে ফি দিতে হয়না। এছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানে ডলারের সর্বোচ্চ দাম প্রণোদনাসহ ১১৭ দশমিক ৮৭ টাকা। কিন্তু, এসব প্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠাতে ফি প্রদান করতে হয়।
যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা পাঠালেই ডলারের বিপরীতে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত প্রণোদনা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে সোনালী এক্সচেঞ্জ সরকার ঘোষিত ২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রণোদনার সাথে এতো দিন নিজস্ব তহবিল থেকে আরো ২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রণোদনাসহ মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করতো। গত ১৭ মার্চ থেকে সোনালী এক্সচেঞ্জ আরো ১ শতাংশ প্রণোদনা বাড়িয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে। এছাড়া স্যানম্যান এক্সপ্রেসের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকে টাকা পাঠালেও ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময়েও প্রতিযোগীতায় ছিলো সোনালী এক্সচেঞ্জ। তখন ডলারের বিপরীতে দাম ছিলো ১০৭ টাকা। অন্যপ্রতিষ্ঠানগুলো বাজার অনুযায়ী ডলারের বাড়তি দাম নির্ধারণ করলেও সোনালী এক্সচেঞ্জ গ্রাহকদের বাড়তি দাম দিতে পারেনি। পরবর্তীতে এবছরের শুরু দিকে ডলারের বাজার টালমাটাল হয়ে পড়লে একপার্যায়ে ডলারের দাম ১২৩ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই সোনালী এক্সচেঞ্জ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে করে হু হু করে কমতে থাকে গ্রাহক।
রমজানের এই সময়ে বিগত বছরগুলোতে সোনালী এক্সচেঞ্জে গ্রাহকদের ভীড় লেগে থাকলেও সরেজমিনে গেলে এবছর তেমনটি দেখা যায়নি। একাধিক দিন শাখায় গিয়েও নিয়মিত এবং পুরোনো গ্রাহকদেরই দেখা গেছে। অথচ আশপাশের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে গ্রাহকদের জটলা দেখা যায়। দামের হেরফেরের কারণে গ্রাহক কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সোনালী এক্সঞ্জের কর্মকর্তারাও। তাঁদের দাবী পুরোনো গ্রাহকরা ফিরছেন এবং গ্রাহক আরো বাড়বে। তাছাড়া দামের বিষয়টি বাংলাদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নির্ধাারণ করা হয়ে থাকে তাঁদের কিছু করার থাকে না। তবে; সোনালী এক্সচেঞ্জের ৮টি শাখা থেকে বিকাশে টাকা পাঠালেও একই দাম এবং প্রণোদনা পরিশোধ করা হয়। যেটি অন্য প্রতিষ্ঠানে কম। এছাড়া গত ২১ নভেম্বর সোনালী এক্সচেঞ্জ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়। যার মাধ্যমে গ্রাহক দ্রুততম সময়ে দেশে টাকা পাঠাতে পারে।
সোনালী এক্সচেঞ্জের নিউইয়র্ক সিটির ওজন পার্ক শাখায় টাকা পাঠাতে আসা লক্ষ্মীপুরের আরিফুল ইসলাম (৪২) জানান, অনেক সময় ৬-৭ টাকাও দামের পার্থক্য থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, এখানে আমাদের তথ্যগুলো আছে। সেজন্য দাম কম হলেও এখান থেকেই দীর্ঘদিন ধরে টাকা পাঠাই। তাছাড়া এখন বোনাস (প্রণোদনা) বেশী দিচ্ছে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দামে পিছিয়ে থাকা এবং গ্রাহক কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী দেবশ্রী মিত্র। তবে; বর্তমানে গ্রাহকদের ৬ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন- গ্রাহকরা এখন প্রায় সমান দাম পাচ্ছেন। সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে টাকা পাঠালে ফি নেওয়া হয়না, বিকাশেও সমান দাম। তাছাড়া, সোনালী এক্সচেঞ্জে গ্রাহকদের অর্থ, তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.