কবিতা আবৃত্তি করছেন প্রি-কে’র শিক্ষার্থী এরিনা মানহা।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন করছেন সায়ান জাহী আলম।
চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা।
আবৃত্তি করছে শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সোসাইটির প্রকাশনা “অক্ষর” এর মোড়ক উন্মোচন।
বক্তব্য রাখছেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি ল্যু।
বক্তব্য রাখছেন নিউইয়য়র্ক সিটি মেয়র অফিসের কমিউনিটি এ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রতিনিধি পেট্রিসিয়া রঘুনন্দন।
বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তাবৃন্দ অতিথিদের সাথে।
বক্তব্য রাখছেন প্রধান অতিথি ড. আবু জাফর মাহমুদ।
একুশের প্রথম প্রহরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে বাংলাদেশ সোসাইটির পুস্পস্তবক অর্পণ।
ড্রামা সার্কেলের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ।
প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে আসা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য চর্চা অব্যাহত রাখাটা অনেক বেশী জরুরী। এতে নিজেদের জাতিস্বত্তার বিকাশ ও স্বকীয়তা ফুটে উঠে বহুজাতির অভিবাসীদের স্বর্গখ্যাত এই যুক্তরাষ্ট্রে। একইসাথে প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের হাত ধরে রক্তে কেনা বাংলা ভাষা, ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের পাশাপাশি বছরব্যাপী দুটি বাংলা স্কুল পরিচালনার মাধ্যমে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য চর্চা অব্যাহত রাখতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের বৃহত্তর সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইউএসএ।
সকল সামাজিক সংঠনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অমর একুশে উদযাপনে দেখা গেছে সেই প্রয়াস। ২০ ফেব্রুয়ারি কুইন্সের উডসাইডের তিব্বতি কমিউনিটি সেন্টারে সন্ধ্যা ৫টা থেকে শিশু-কিশোরদের আগমন ঘটতে থাকে। একে একে এদেশে জন্ম নেয়া ও বেড় ওঠা নতুন প্রজন্মের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো সেন্টার। বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপশি বিপুল সংখ্যক শিশুকিশোর ও অভিভাবকের উপস্থিতিতে দেশি আবহ তৈরী করে।
চিত্রাংকন, আবৃত্তি প্রতিযোগীতা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান আয়োজনের এই উদযাপনের সমাপ্তী ঘটে রাত ১২টা এক মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে পুস্পস্তবক অর্পন কর্মসূচী মধ্য দিয়ে।
একুশ উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কমিউনিটির প্রিয় মানুষ ড. আবু জাফর মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন- ছোট্ট শিশু কিশোরারা এখানে এসেছে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং দেশাত্মবোধের কারণে। অভিবাবকদের সচেতনতা ও আন্তরিকতার কারণেই আমাদের সন্তানরা নিজস্ব সাংস্কৃতিকে লালন করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ সোসাইটির এমন আয়োজনের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা এবং বাংলাদেশীদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি ল্যু। বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে একাত্ম এই সিনেটর উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নিউইয়য়র্ক সিটি মেয়র অফিসের কমিউনিটি এ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রতিনিধি পেট্রিসিয়া রঘুনন্দন। তিনি মাতৃভাষা দিবসে সবার প্রতি নিউয়ক সিটি মেয়রের পক্ষ থেকে সবার প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানান।
একুশের এই মুল অনুষ্ঠানমালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত একুশ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ফারুক চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মাইনুল উদ্দিন মাহবুব। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ। পুরস্কার বিতরণী ও পুস্পস্তবক অর্পণসহ পুরো অনুষ্ঠান সমন্বয় করেন সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া এবং সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্রে কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সেক্রেটারি ইউসুফ জসিম। গীতা থেকে পাঠ করেন ঋষি। বাংলদেশী তরুণ সায়ান জাহী আলম বেহালার সুরে পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত। তাঁর অনবদ্য পরিবেশনা মিলনায়তন ভর্তি প্রবাসীদের মাঝে আবেগ ছুঁয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন করা হয় “অক্ষর” নামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশ সোসাইটির বিশেষ প্রকাশনার। এ পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অক্ষর’র সম্পাদক ফয়সল আহমদ। সঞ্চালনা ও সবার হাতে প্রকাশনা তুলে দেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রিজু মোহাম্মদসহ সোসাইটির নেৃতৃবন্দ।
বাংলাদেশ সোসাইটির কুইন্স এবং ব্রুকলিনের বাংলা স্কুলের দুই পরিচালক ফারজিন রাকিবা এবং পারভিন সুলতানার তত্ত্ববধানে সন্ধ্যা ৫ টা থেকে শুরু হওয়া চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় তিনটি বিভাগে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। রঙতুলিতে শহীদ মিনার, প্রিয় বর্ণমালা, ভাষা আন্দোলন, আবহমান বাংলা, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয় ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। আগত অতিথিরা শিশু-কিশোরদের বাংলা এবং বাংলাদেশের প্রতি এমন ভালোবাসায় আপ্লুত হন।
এর পর অনুষ্ঠান মঞ্চে একইভাবে তিন বিভাগে উন্মুক্ত আবৃত্তি প্রতিযোগীতায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। শিশু-কিশোরদের আবৃত্তি মুগ্ধতা ছড়ায় উপস্থিত সবার মাঝে। তিন বছরের ছোট্ট বুড়ি প্রি কে’র শিক্ষার্থী এরিনা মানহা আবৃত্তি করতে মঞ্চে এলে সবার মনযোগ আকর্ষণ করে। তাঁর মাইক্রোফোন ধরতে হয় বাংলা স্কুলের পরিচালন ফারজিন রাকিবাকে।
বিচারকমন্ডলীর বিচারকার্য শেষে চিত্রাংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগীতায় তিনটি বিভাগে মোট ১৮জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
আলোচনাপর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একুশের গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কৃঞ্চা তিথি, রোখসানা মীর্জা, আলভান চৌধুরী, নাজু আখন্দ প্রমুখ। কবিতা পাঠ ও নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন নৃত্যাঞ্জলীর শিল্পীবৃন্দ এবং ব্রুকলিন বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থী শেখ মাইসুরা মুনতাহা।
রাত বাড়তে থাকে সেই সাথে হিলসাইডের তিব্বতী কমিউনিটি সেন্টার বাড়তে থাকে কমিউনিটি সংগঠনগুলো এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের আগমন। বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাবেক নেতৃবৃন্দ, আঞ্চলিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দেও উপস্থিতিতে মুখরিত হয় তিব্বতী কমিউনিটি সেন্টার।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া তাঁর বক্তব্যে সম্মিলিত একুশ উদযাপনে অংশগ্রহণকারী সকল সংগঠন ও উপস্থিত সকল প্রবাসীকে ধন্যবাদ জানান। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বাংলা চর্চা এবং দেশি সংস্কৃতির বিকাশের সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। তিনি, অভিবাবকদের ধন্যবাদ জানান শিশু-কিশোরদের মাঝে বাংলা চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য।
রাত ১২টা ১ মিনিটে দিবসের প্রথম প্রহরে প্রথমে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ। এরপর একে একে ড্রামা সার্কেল, ব্রুকলিন-কুইন্স ফ্রেন্ডস্ সোসাইটি, বাংলাদশ-আমেরিকান কালচারাল সোসাইটি ইউএসএ, এ জেড এম গ্রুপ, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসইটি, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি, দোহার উপজেলা সোসইটি, বাংলাদেশ কার-লিমোজিন সোসাইটি, সিলেন গণদাবি পরিষদ, মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ ৯২টি সংগঠনের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ সোসইটি ইউএসএ ইনক্ এবার সম্মিলিত একুশ উদযাপন করে।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.