ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে ১৯৯৭ সালে আমারা দুই ভাই একসাথে এসেছিলাম আমেরিকায়। এই ফেব্রুয়ারিতে আমার ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আপনারা সবাই তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন। কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক স্টেটের অরেঞ্জ কাউন্টির উডব্যারিতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হাফিজ আহম্মেদ অ্যাঞ্জেলের বড় ভাই এটিএম শামছুজ্জামান পিন্টু।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে এশার নামাজের পর জানাজার পূর্বে পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলার সময় কন্ঠ ভারি হয়ে উঠছিলো তাঁর। এসময় তিনি বারবার অ্যাঞ্জেলের ছেলে ইশাম আহম্মেদকে জড়িয়ে ধরছিলেন।
প্রয়াত বাবা-মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন ইউএস মিলিটিারি একাডেমির ক্যাডেট ইশাম আহম্মেদ। এসময় উপস্থিত শোকাহত মুসুল্লীরা আপ্লুত হয়ে উঠেন। দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও ইয়োলো সোসাইটির সভাপতি হাবিুবুর রহমানের কন্ঠেও ধ্বনিত হয় গভীর শোক । কাছ থেকে দেখা অ্যাঞ্জেলকে ভুলবার নয় বলে তাঁর অভিব্যাক্তি।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন নিউইয়কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জোনারেল’র পক্ষ থেকে ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান তুহিন, জয়েন্ট সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এবং ইউএস আর্মির একজন কর্মকর্তা। জানাজায় ইউএস আর্মির বেশ কয়েকজন ক্যাডেট এবং কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজনসহ বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী অংশগ্রহণ করেন। মুসুল্লীদের কন্ঠে বারবার ঘুরেফিরে আসে এই দম্পতির মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রসঙ্গ। বন্ধুবৎসল অ্যাঞ্জেল ও তাঁর স্ত্রী কমিউনিটিতে পরিচিতমুখ ছিলেন। জানাজায় বিপুল সংখ্যক মুসুল্লীর উপস্থিতি সেটি জানান দেয়। জানাজা শেষে শেষবারের মতো অ্যাঞ্জেলের মরদেহ দেখেন মুসুল্লীরা।
শুক্রবার সকাল ১১টায় লংআইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল সেমিট্রিতে দাফন করা হয় হাফিজ আহম্মেদ অ্যাঞ্জেল (৫২) ও সাথি আহম্মেদ (৪৬)কে। এসময় পরিবারের সদস্য, ইয়োলো সোসাইটির নেতৃবৃন্দসহ পরিচিতজনরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গতঃ ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে নিউইয়র্ক স্টেটের অরেঞ্জ কাউন্টির উডব্যারিতে পুলিশের ধাওয়া করা একটি দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হাফিজ আহম্মেদ অ্যাঞ্জেল (৫২) ও তাঁর স্ত্রী সাথি আহম্মেদ (৪৬)। এসময় গাড়িতে থাকা তাঁদেও ৮ বছরের মেয়ে রাঈদা ইসলামকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টির ওয়েস্টচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে শংকামুক্ত রয়েছে। নিহত দম্পতির গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে।
হাফিজ আহম্মেদ ম্যানহাটনের ২৬ ফেডারেল প্লাজায় অবিস্থত ইউএস আর্মির লজিস্টিক সাপোর্ট ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ইয়লো ক্যাব চালিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইউএস আর্মিতে বেসামরিক কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দান করেন।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.