রমজান উপলক্ষে আমরা টাকা পাঠাচ্ছি। এমনিতে সবসময়তো টাকা পাঠানো হয়, কিন্তু এখন ঈদ উপলক্ষে বেশী করে পাঠাচ্ছি। আত্মীয় স্বজনদের জন্য, গরীব মানুষদের দেয়ার জন্য চেষ্টা করতেছি। আত্মীয় স্বজন আছে শ্বশুর বাড়ি আছে, বাবার বাড়ি আছে সবার জন্য টাকা পাঠাচ্ছি সামর্থ্য অনুযায়ী। সবাই যেনো ভালোভাবে ঈদ করতে পারে সেজন্য।
আবেগতাড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রোকেয়া আক্তার। তিনি নিউইয়র্কে বাঙালীদের রাজধানী খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেসে এসেছিলেন দেশে টাকা পাঠানোর জন্য। জানালেন নিজেদের যেমনই হোক, ঈদে দেশে টাকা পাঠাতে হয়।
একই কথা ধ্বণিত হয়েছে ওজন পার্কের সোনালী এক্সচেঞ্জে টাকা পাঠাতে আসা এ কে এম নজরুল ইসলাম বাচ্চুর কন্ঠেও। তাঁরমতে রমজানে স্পেশাল সেহরী, ইফতারের আয়োজন কিংবা বিশেষ খাবারের আয়োজনের (মেজবান/জেয়াফত) জন্য টাকা পাঠাতে হয়। নিয়মিত টাকা পাঠানোর চেয়ে রমজানে বেশী টাকা পাঠাতে হয়। আবার ঈদের আগে স্বজনদের ঈদের কাপড়চোপড় কেনা এবং গরীব আত্মীয় স্বজনদের সহায়তার জন্য টাকা পাঠাই।
এভাবেই রমজান, ঈদ কিংবা যেকোন উৎসবে প্রবাসীদের নিজেদের খরছের বাজেটে একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে দেশে স্বজনদের জন্য। এমন অনেকে আছেন যারা সারা বছর দেশে খুব একটা টাকা না পাঠালেও ঈদে স্বজনদের জন্য ঠিকই টাকা পাঠান। তাই; কস্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে স্বজনদের মুখে হাসি ফুটানো প্রবাসীদের পদচারণা ছিলো রমজানের শুরু হওয়ার আগ থেকেই শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মানি এক্সচেঞ্জ এবং মানি ট্রান্সফার এজেন্টের অফিস ও দোকানগুলোতে ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণের এই প্রবাহ বেড়েছে আশাতীত। গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে এই প্রবাহ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। এপ্রিলে তা দ্বিগুনের কাছাকাছি যাবে। যদিও রমজানের শুরুতে ডলারের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১১৩ দশমিক ৫০ টাকা প্রদান করা হলেও রমজানের মাঝামাঝি থেকে তা কমে ১০৭ টাকায় দাঁড়ায়।
প্রথম দিকে মানি ট্রান্সফার কোম্পানীগুলোর কাছে ব্যাংকসমূহের অংঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো মার খেলেও এখন বাংলাদেশী ব্যাংক সমূহের মানি এক্সচেঞ্জ শাখাগুলোতে প্রবাসীদের ভীড় বেশী। কারণ সেগুলোতে ফি নেওয়া হয়না। রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রবাসী ও মানি চেঞ্জারদের সাথে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েজ আর্ণারস্ রেমিমেন্স বিভাগের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন ২৯৮ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ২৩১ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলার এবং মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৩ দশমিক ৯০ ডলারে।
রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রবাসীদের একেবারে কাছ থেকে সেবা প্রদান করে থাকেন মানি ট্রান্সফার কোম্পানীর এজেন্টরা। এরইকমই একজন হচ্ছেন ওজন পার্কেও এ্যাংকর ট্রাভেলস্ এর কর্ণধার এএসএম মাঈন উদ্দিন পিন্টু। তাঁর মতে রমজান কিংবা ঈদকে ঘিরে দেশে টাকা পাঠানোর প্রবাহ বাড়ে প্রতি বছরই। রমজানের খরছের কারণে আগে টাকা পাঠায় প্রবাসীরা সেজন্য মার্চে প্রবাহ বেড়েছে। ঈদকে ঘিরে তাঁর এখানে এপ্রিলে এই প্রবাহ দ্বিগুন হতে পারে।
এখানে টাকা পাঠাতে আসা মাওলানা আহমেদ বলেন- প্রতিমাসের স্বাভাবিক খরছে তুলনায় রমজানে বেশী টাকা পাঠাতে হয়। দেশে ফ্যামিলি আছে, অনেকে বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য পাঠান। আবার যাকাত, ফিতরাসহ নানান কারণে এই সময়ে বেশী টাকা পাঠাতে হয়।
যুক্তরাস্ট্রে বাংলাদেশী মালিকানাধীন মানিট্রান্সফার কোম্পানী সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেস’র প্রধান নির্বাহী মাসুদ রানা তপন জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে তাঁদের এখনে ৩০-৪০ শতাংশ রেমিটেন্স প্রবাহ রেড়ছে। তাঁদের ৪টি নিজস্ব শাখা ও ৭৫টি এজেন্ট লোকেশনের মাধ্যমে প্রবাসীরা টাকা পাঠানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন। ঈদকে ঘিরে এপ্রিলে এই প্রবাহ আরো বাড়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
ডলারের বিপরীতে টাকার পরিমান কমে যাওয়ায় ভীড় বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী এক্সচেঞ্জে। একথার সতত্যা মিলেছে সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবশ্রী মিত্র কথায়ও। তিনি বলেন- রমজান এবং ঈদকে ঘিরে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে সবময়ই। তাঁদের এমন অনেক গ্রাহক আছেন যারা সারাবছর টাকা না পাঠালেও রমজান এবং ঈদে দেশে টাকা পাঠান। নিয়মিত গ্রাহকরাতো আছেনই।
ফেব্রুয়ারি তুলনায় এপ্রিলে দ্বিগুনের কাছাকাছি হতে পারে বলে তিনি জানান। সোনালী এক্সচেঞ্জের ৬টি শাখা থেকেই প্রবাসীরা একই বিনিময় হারে বিকাশেও টাকা পাঠাতে পারেন। দেশে ব্যাংক বন্ধ হলেও বিকাশের সেই সুবিধা সবসময় নিতে পারেন প্রবাসীরা।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.