× হোম দেশির খবর অনুষ্ঠান-কর্মসূচী-উদযাপন দেশের খবর দশদিক দুনিয়া দশকথা ভিডিও সব ছবি ভিডিও আর্কাইভ

নিউইয়র্কের মসজিদে মসজিদে ইফতার ইসলামের সৌরভ ছড়ায়

রুদ্র মাসুদ, নিউইয়র্ক

১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০২:৪৪ এএম । আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ০২:১৬ এএম

মসজিদের নগরী হয়ে উঠছে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক। সার্চ ইঞ্জিন গুগলে এই নগরীতে প্রদর্শিত মসজিদের সংখ্যা (২৭৫টি) যেনো সেকথাই মনে করিয়ে দেয়। আর পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন থেকেই মসজিদে মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজন ইসলামের সৌরভ ছড়ায় নগরীর এলাকাগুলোতে। বেশীরভাগ মসজিদেই পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও ইফতারের ব্যাবস্থা করা হয়ে থাকে। ইফতারে শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো।

বিভিন্ন দেশ, জাতি, সংস্কৃতি কিংবা বর্ণের মসুলমানরা একত্রিত হয়ে ইফতারে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার নিদের্শ পালনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেন। যেখানে কোন ভেদাভেদ থাকেনা। ইফতারে এমন আয়োজন সওয়াব অর্জনের সুযোগ হিসাবেও কাজে লাগিয়ে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। যারফলে চলার পথে যাদের ইফতারের সময় হয়ে যারা সহজেই নিকটবর্তী মসজিদে গিয়ে ইফতারে অংশ নিতে পারেন। এমনটি বলছেন মসজিদ পরিচালনা সংশ্লিষ্টরা।

মসজিদ পরিচালনা কমিটি, মুসুল্লী, বিভিন্ন ব্যাক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মসজিদগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে সুস্বাদু নানান ইফতার সামগ্রী। । বিভিন্ন সংগঠন আবার মসজিদেই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। সববয়সের রোজারদের অংশগ্রহণে এই ইফতার আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং মুসলিম কমিউনিটির একতার প্রতীক হয়ে উঠছে।

বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে- আসর নামাজের পর থেকেই ইফতার আয়োজন নিয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য, স্বেচ্ছাসেবকসহ সবার কর্মতৎপরতা শুরু হয়। খবার পরিবেশনের নানান দিক নিয়ে ব্যাস্ততা থাকে চোখে পড়ার মতো। খাবার পরিবেশনের পর আল্লাহ সুবহানাহুতায়লার ভয়ে খাবার সামগ্রী নিয়ে অপেক্ষারত রোজাদারদের দীর্ঘ সারী মসজিদগুলোতে এক বরকতময় পরিবেশের অবতারণা করে। 

ইফতারেরর পূর্বে দোয়া কবুলের এই সময়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে সবাই হাত তোলেন খতিব-রোজাদার মুসুল্লীরা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, সুস্থতা কমনা, মুসলিম উম্মাহর শান্তি কমনা, দুনিয়াজোড়া মুসলমানদের নির্যাতন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা, রিজিক বৃদ্ধি, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দোয়া করা হয়। অতপরঃ আজান দেয়া হলে সরাদিন আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার পর রোজাদার আজানের সাথে সাথে মুখে ইফতার তোলেন। মসজিদগুলোতে ইফতারে অংশ নেয়ার জন্য মহিলাদের জন্য থাকে পৃথক ব্যবস্থা।

ম্যানহাটনের নাইনটিসিক্স স্ট্রিট ও সেকেন্ড এভিনিউর কর্ণারে অবস্থিত দ্যা ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের মসজিদের প্রতিদিন ৬’শর মতো রোজাদার ইফতার গ্রহণ করে থাকেন বলে জানানো হয়। এলাকা এবং মসজিদের আয়তন বিবেচনায় প্রতিটি মসজিদেই এভাবেই রোজাদারদের অংশগ্রহণ থাকে প্রতিদিন।

কুইন্সের এস্টোরিয়ায় সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আবু হোরায়রা দেখা যায় ইফতারে সববয়সীরা ইফতারে অংশ নিয়েছেন। এখানে দুই’শ থেকে আড়াইশজন প্রতিদিন ইফতার করে থাকেন।

ব্রুকলিনের নিউকার্কের বেলাল মসিজদে ইফতার আয়োজনে অনন্য সংযোজন হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল। মসজিদ পরিচালনা কমিটি, মুসুল্লী ও স্থানীয়দের পাশাপাশি সংগঠনের এমন আয়োজনের ফলে কমিউনিটির প্রায় সবাই কোন কোন দিনের ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে থাকেন। কোন কোন দিন সর্বোচ্ছ সাড়ে ৩’শ জনের আয়োজনও হয়ে থাকে এখানে।

মসজিদগুলোর স্বেচ্ছাসেবীরা ও মসজিদের পক্ষ থেকে রোজাদারদেরকে প্রতিদিন ইফতার গ্রহণে আসার আমন্ত্রন জানানো হয়ে থাকে মসজিদগুলোতে। ইফতার আয়োজন নিয়ে দেশী খবরের সাথে কথা হয় খতিব, মসজিদ পরিচালনা কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক ও রোজাদারের সাথে।

উবার চালান আতাউর রহমান রাসেল। কাজে থাকার কারণে বাসায় কিংবা পূর্বনির্ধারিত কোথাও বসে ইফতার করা হয়ে উঠেনা অনেক সময়। ইফতারের সময় কাছাকাছি কোন মসজিদে তিনি ইফতার কওে নেন। নিউইয়র্কের পাঁচ মসজিদে এবং নিউজার্সির এক মসজিদে তিনি ইফতার করেছেন। মসজিদগুলোতে এমন ইফতার আয়োজনের কারণেই তাঁরমতো রোজাদারদের ইফতার নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়না। উপরন্তু সুন্দও আয়োজনে ইফতার সম্পন্ন করতে পারেন।

ওজনপার্কের ফুলতলী জামে মসজিদ এন্ড ইসলামিক ইনিস্টিউটের সেক্রেটারি মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের মতে ইফতার করা এবং ইফতার করানোর মধ্যে যে সওয়াব আছে এর গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারছি এবং চর্চা করছি। ইসলামের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এটি উৎসারিত। এখানে বয়স, ধনী-দরিদ্র কিংবা বর্ণের কোন পার্থক্য থাকেনা। সবাই এককাতারে বসে ইফতার করে থাকে। সবচে বড় কথা হচ্ছে বাংলাদেশী, পাকিস্থানী, ভারতীয়সহ বিভিন্ন দেশ-জাতির মুসলমানরা একসাথে বসে ইফতার করে সবার জন্য দোয়া হয়। অনেকেই ইফতার করিয়ে দোয়া ও ফজিলত অর্জন করতে আগ্রহী হন।

নিউকার্ক বেলাল মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজুর রহমানের মতে- ইফতারে কমিউনিটির সবার সাথে সবার দেখাও হয়। প্রতিবছর এই মসজিদে একইভাবে ইফতারের আয়োজন হয়ে আসছে। এখানে মহিলাদের জন্যও ইফতারের আয়োজন হয়ে থাকে। সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ ইফতার আয়োজনের হয়ে থাকে প্রায়শঃই। যার ফলে নিয়মিত মুসুল্লী, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিও থাকে।

তিনি ইফতার আয়োজনের দিকগুলোর পাশাপাশি ইফতার, সেহরীর সময়ে মসজিদের সামনে ও আশপাশের এলাকায় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের টহল এবং নিরাপত্তা তদারকি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার প্রতি ভালোবাসা ও মুসলিম কমিউনিটির একতা হিসাবে এই ইফতার আয়োজনকে দেখছেন ব্রুকলিনের নিউকার্কের হযরত বেলাল (রাঃ) জামে মসজিদের খতিব ড. মুফতি সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আনসারুল করিম (আল-আজহারী)।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ইফতার মুসলিম উম্মাহ’র জন্য একটা বিরাট উপলক্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ইফতারের পূর্বক্ষণে দোয়া কবুল হয়। এবং এটা আমাদের সৌহার্দ্য, পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভালোবাসা এবং আল্লাহ প্রেমের উজ্জল দৃষ্টান্ত। রোজাদার ইফতার নিয়ে অপেক্ষা করে ক্ষুধা-তৃষ্ণার পর খায়না শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়ে এবং সন্তুষ্টির জন্য।


Deshi Khobor

সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)

ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ

© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.