পুরস্কার বিজয়ী তিন ইরানী নারী সাংবাদিক। ছবি-ইউনেস্কোর সৌজন্যে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কো এবছরের ওয়ার্ল্ড গুইলারমো ক্যানো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম প্রাইজ ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের এ পুরস্কার পেয়েছেন কারাবান্দি তিন ইরানী নারী সাংবাদিক নিলুফার হামেদী, এলাহি মোহাম্মদী এবং নারগিস মোহাম্মদী। বিশ্বব্যাপী নারী সাংবাদিকরা যখন ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে কাজ করে থাকে সেই সময়ে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনেস্কো। তথ্য সূত্র-ইউনেস্কো।
এ প্রসঙ্গে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজৌলে বলেছেন- নারী সাংবাদিকদের প্রতি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শ্রদ্ধা জানানো গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাজ করতে বাধা দেয়া এবং তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হুমকি ও আক্রমণের সম্মুখীন হয়। আমরা সত্য ও জবাবদিহিতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে সম্মান জানাচ্ছি।
এনিয়ে গণমাধ্যমের পেশাদারদের আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের প্রধান জয়নাব সালবি বলেন, "আমরা ইরানী নারী সাংবাদিকদের সাহসী কাজের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাদের রিপোর্টিং একটি ঐতিহাসিক নারী নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের দিকে নিয়ে গেছে।"
“তারা রিপোর্ট করার এবং সত্য প্রকাশে তাদের প্রতিশ্রুতির জন্য চড়া মূল্য পরিশোধ করেছে। এবং এর জন্য, আমরা তাদের সম্মান করতে এবং তারা নিরাপদ ও মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্বব্যাপী প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রসঙ্গতঃ ইরানে রাষ্ট্রীয় মানদন্ড অনুযায়ী হিজাব না পরায় ২২ বছর বয়সী তরুনী মাহসা আমিনীকে গ্রেফতার করেছিলো ইরানী ধর্মীয় নৈতিকতা পুলিশের গাইডেন্স পেট্রোল। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তেহরানের একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের নির্যাতনের তাঁর মৃত্যুর অভিযোগে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ হয়। এনিয়ে সংবাদ ও মতামত প্রকাশের জের ধরে গ্রেফতার হয়েছিলেন পুরস্কার বিজয়ী এই তিন নারী সাংবাদিক।
তিন বিজীয়-
নিলুফার হামেদী শীর্ষস্থানীয় সংস্কারবাদী দৈনিক শার্ঘে লিখেন। তিনি ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানে পুলিশের হেফাজতে নিহত মাহসা আমিনির মৃত্যুর খবরটি প্রকাশ করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে তাকে কারাগারে রয়েছেন।
ইলাহি মোহাম্মদী সংস্কারবাদী সংবাদপত্র হাম-মিহানের জন্য সামাজিক সমস্যা এবং লিঙ্গ সমতা কভার করেন। তিনি মাহসা আমিনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এভিন কারাগারে আটকও ছিলেন। এর আগে তাকে তার কাজের কারণে ২০২০ সালে এক বছরের জন্য রিপোর্ট করতে বাধা দেওয়া হয়েছিলো।
নার্গিস মোহাম্মদী দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন এবং তেহরান-ভিত্তিক নাগরিক সমাজ সংগঠন ডিফেন্ডারস অফ হিউম্যান রাইটস সেন্টার (ডিএইচআরসি) এর লেখক এবং সহ-পরিচালকও। তিনি বর্তমানে এভিন কারাগারে ১৬ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
মিসেস হামেদী এবং মিসেস মোহাম্মদী যৌথভাবে ২০২৩ সালে কানাডিয়ান জার্নালিস্ট ফর ফ্রি এক্সপ্রেশন (ঈঔঋঊ) এর ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এর সাংবাদিকতায বিবেক ও সততার জন্য লুই এম লিয়ন্স এওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া টাইম ম্যাগাজিনে ২০২৩ সালের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় তাদেও দুইজনের নাম রয়েছে।
মিসেস মোহাম্মদী কারাগার থেকে প্রিন্টে রিপোর্ট করা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি অন্যান্য নারী বন্দীদের সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন এবং এই সাক্ষাৎকারগুলো তার হোয়াইট টর্চার বইয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গত বছর তিনি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) সাহস পুরস্কার জিতেছিলেন।
গুইলারমো ক্যানো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম প্রাইজ
ঝুঁকির মধ্যেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য ব্যাক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে গুইলারমো ক্যানো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম প্রাইজ প্রদান করা হয়। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কো ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে।
কলম্বিয়ান সাংবাদিক গুইলারমো ক্যানো ইসাজার সম্মানে এই পুরস্কারের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ১৭ ডিসেম্বর ১৯৮৬ সালে কলম্বিয়ার বোগোটাতে তাঁর সংবাদপত্র ‘এল এস্পেক্টাদোর’ এর অফিসের সামনে খুন হন।
এর আগে বিজয়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা, রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ।
এদিকে ইউনেস্কোর বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়েছে-বিশ্বব্যাপী, নারী সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে। শারিরীকভাবে এবং অনলাইনে অপবাদ, যৌন যৌনতাবাদী ঘৃণামূলক বক্তব্য, ট্রোলিং, শারীরিক আক্রমণ, ধর্ষণ এবং এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছে। সাংবাকিদের সুরক্ষায় কাজ করে আসছে ইউনেস্কো। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইউনেস্কোর একটি ম্যান্ডেট রয়েছে।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.