বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখছেন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরে রেকর্ড সংখ্যক ১৩ হাজার ৫৬৩জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসেন। যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ২৮ ভাগ বেশী। যদিও প্রতিবছরই এই রেকর্ড ভাঙছে। শুধুমাত্র গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এসেছে প্রায় ৪২ হাজার শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি দেখে মনে হতে পারে উচ্চ শিক্ষায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের যেনো যুক্তরাষ্ট্রগামী স্রোত নেমেছে।
শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কারণে স্বাভাবিক কর্মদিবসের বাইরে ভিসা স্বাক্ষাৎকারের জন্য সুপার প্রাইডের মতো বিশেষ আয়োজন করতে হয়েছে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে। সংশ্লিষ্টদের মতে যে পরিমান শিক্ষার্থী ভিসা পেয়ে থাকেন তারচেয়ে অন্তত কয়েকগুন বেশী শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের এমন আগ্রহে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে স্নাতক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সাধরণত প্রযুক্তি, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও ব্যাবসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভর্তি হয়ে থাকেন। একটা সময় ছাত্ররাই বেশীরভাগ পড়তে আসলেও এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ছাত্রীর সংখ্যাও। এদিকে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করতে না পারায় ছিটকে পড়ছেন অনেকেই। যাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আবার অনেকে ভাষাগত জটিলতার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে কিংবা স্থানান্তরিত হয়ে মূল বিষয়ের বাইরে গিয়ে ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হতে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যায়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২০২৩ সালের ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন একচেঞ্জ এর বরাত দিয়ে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৫৬৩জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছেন। যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ২৮ ভাগ বেশী।
ওপেন ডোরস্ এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির এই হার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্ছ এবং পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম।
ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে প্রকাশিত তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১ হাজার ৫৯৬জন। এরমধ্যে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৮৩৮জন, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৫৯৮জন, ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ১০ হাজার ৫৯৭ এবং ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৩ হাজার ৫৬৩জন। ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ হাজার ৩১৪ জন শিক্ষার্থী। যা গত একদশকে শতকারা হিসাবে ৩’শ ভাগ বেড়ে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার, ৫৬৩ জন।
প্রসঙ্গতঃ স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকেও বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার্থে ছাত্রছাত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে বৃত্তি নিয়ে ও নিজ খরছে পড়তে আসতো। ১৯৭৪-১৯৭৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৮০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তথ্যসেবা দিতে বাংলাদেশস্থ দুতাবাসের পক্ষ থেকে ৬টি কেন্দ্র থেকে অনলাইনে এবং সরাসরি শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের জন্য একক এবং দলগত অধিবেশন পরিচালনা করে থাকে। যার মধ্যে ঢাকায় ২টি এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটে একটি করে কেন্দ্র রয়েছে।
প্রতি বছর হু হু করে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনী পরামর্শ এবং তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (বাংলাদেশে) মাধ্যমেই মূলত শিক্ষার্থীরা আবেদন, ভর্তি, টিউশন ফি, সেমিস্টার ফি জমা দেয়ার কাজগুলো করে থাকেন। পাশাপাশি ভিসার জন্য আবেদন, স্বাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি, প্রয়োনীয় কাগজপত্রসহ পূর্বশর্ত পূরণের ক্ষেত্রেও এসকল প্রতিষ্ঠান তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
এনিয়ে কথা হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভর্ভিসহ উচ্চ শিক্ষায় সহায়তাকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান ঢাকার ইরিত্রা ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী ফিরোজ ই এম ইকবালের সাথে। তিনি বলেন- ওপেন ডোরস্ এর প্রতিবেদনে ভিসা প্রদান তথা ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য দেয়া হয়েছে আমরা শুধু সেটি দেখছি। বাস্তবতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে দূতাবাসকে, ভিসা প্রাপ্তি এখন অনেক দূরূহ হয়ে হঠছে। যারা ভিসা পেয়ে থাকেন তার চেয়ে কয়েকগুন শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করে থাকে। বেশীরভাগ শিক্ষার্থী সাধারণত তথ্য-প্রযুক্তি এবং ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয় পছন্দের শীর্ষে রাখেন।
তিনি বলেন. শিক্ষার্থীদের যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁদের উচিৎ যেনো পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। এজন্য অভিবাবকদেরও প্রস্তুতি থাকা ভালো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নেওয়ায় আমরা উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা যুগান্তকারী গবেষণায় জড়িত হওয়া থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের জীবনকে সমৃদ্ধৃ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো জুড়ে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করে চলেছে।
সম্পাদক : মাহমুদুল হাসান (রুদ্র মাসুদ)
ঠিকানাঃ ৮৬-৩২ ১০২ এভিনিউ, ওজন পার্ক, দ্বিতীয় তলা, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই-১১৪১৬, ইউএসএ
© 2024 Deshi Khobor All Rights Reserved. Developed By Root Soft Bangladesh.